ইদানিং ফেইসবুক এবং ব্লগে আহলে
আমেরিকান/ইহুদি/সৌদি দালাল গোষ্ঠী
ইচ্ছেমত পবিত্র শবে বরাত এর বিরুদ্ধে
অব্যাহতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে
মুসলিমদের আমল ধ্বংস করার নিমিত্তে।
অতীতে এই গোষ্ঠী কিভাবে মুসলিমদের
ঈমান ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে কি করে
মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ বিদ্বেষী মনভাব
ঢুকিয়ে দিচ্ছে তা আমি তুলে ধরেছিলাম।এই
আহলে হাদিস নামধারী এই আহলে
আম্রিকান লবিষ্টগুলি এখন শুধু ঈমান ধ্বংস
করার মিশনেই সীমাবদ্ধ নেই এখন তারা
মুসলিমদের আমল ধ্বংস করার মিশনে
নেমেছে।কারন এরা বুঝতে পারছে
মুসলিমদের পরিপূর্ণ ইসলাম থেকে খারিজ
করে দিতে মুসলিমদের আমল ধ্বংস করতে
হবে শুধু ঈমান ধ্বংস করলেই হবে না। এদের
এসব প্রতারনাপূর্ন আই ওয়াশ মুলক
কথাবার্তায় অনেক সাধারন মুসলিম
বিভ্রান্ত হয়ে তারা পবিত্র শবে বরাত এর
নিয়ামতকে পরিত্যাগ করছে। তাদের সঠিক
বুঝের জন্য আমি এখানে শবে বরাতের দলিল
ও এর মাহাত্ম অত্যন্ত সুন্দর সহজ প্রাণবন্ত
ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করব যাতে বিষয়টি
বুঝতে কারো এতটুকু কষ্ট না হয়।আশা করে
একটু কষ্ট করে ধর্য ধরে পড়বেন বহুত ফায়দা
হবে ইনশা আল্লাহ
আহলে হাদিস গোষ্ঠী মানুষের আই ওয়াশ
করে যেভাবেঃ
এরা অপপ্রচার চালায় শবে বরাত বলে
হাদিস কুরানে কিছু নেই্,এটা স্রেফ একটা
বিদাত।আবার মানুষকে এভাবে ভয় দেখায়
প্রত্যেক বিদাতি প্রথভ্রষ্ট,প্রত্যেক বিদাতি
জাহান্নামি,আপনি প্রথভষ্ট হবেন আপনি
জাহান্নামি হবেন?
সাধারণ লোকেরা তো আর জানেনা
কোনটা হাদিসে আছে ,তারা তো আর বুঝে
না কোনটা বিদাত আর কোনটা আমলযোগ্য।
তাই এদের কথায় লোকেরা সহজেই বিভ্রান্ত
হয়ে যায়।আহলে হাদিস প্রতারক গোষ্ঠীর
এই প্রতারণাটা কাটা দিয়ে কাটা কাটা
তুলার মত।মানে কুরান হাদিসের নাম করে
কুরান হাদিসকে ঘায়েল করা।শুরুতেই বলেছি
এদের এসকল আই ওয়াশ শুধুই মুসলিমদের ঈমান
আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নিমিত্তে।
এদের ভেলকি বাজির আরেকটি কৌশল হল
এরা আপনাকে বুঝাবে সবে বরাত সম্পর্কে
হাদিসে যা এসেছে তা জাল জইফ বাতিল
হেন তেন।এরা কত বড় মিথায়বাদী সত্য
গোপনকারী কাজ্জাব আপনি আরেকটূ ভিতরে
গেলেই বুঝতে পারবেন।চলুন দেখা যাক শবে
বরাত রিলেটেড হাদিস ও এর সনদগুলি।
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস ও সনদঃ
১. "হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। তিনি
বলেন, একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সাথে কোন এক রাত্রিতে রাতযাপন
করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না
পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য
কোন আহলিয়া রদ্বিয়ালাহু তায়ালা
আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ
নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে
উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম।
সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ
পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ
অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে
ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং
বললেনঃ আপনি কি মনে করেন আল্লাহ
পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে
আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি
বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা
করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য
কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ
নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ
রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন
অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর
তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম
রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে
ক্ষমা করে থাকেন"।
(সুনানে তিরমিযি (২/১২১,১২২) , (মুসনাদে
আহমাদ ৬/২৩৮)ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত
শরীফ)
সনদের মানঃ (a) ইবন তাইমিইয়্যার ফাওজুল
ক্বাদীর, ২য় খণ্ড, পৃ,৩১৭
২. মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাঁর
সৃষ্টিলোকের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং
সবাইকে মাফ করে দেন কেবল মুশরিক ব্যক্তি
ছাড়া ও যার মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে
তাকে ছাড়া। বর্ণনায়, মুয়ায বিন্ জাবাল।
(a)আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-
তারহীবে (২/১৩২)বলেন, “সহিস হাদিস”।
(b)আহলে হাদিস গুরু আল-আলবানীবাণীও
বলেন হাদিসটি সহিহ। আস-সিলসিলাহ
আস-সাহীহাহ (৩/১৩৫))
৩. আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে
তাঁর বান্দাদের দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
তিনি বিশ্বাসীদেরকে মাফ করেন ও
অবিশ্বাসীদের ক্ষমা স্থগিত করেন এবং
হিংসা-বিদ্বেষীদেরকে তাদের নিজ
অবস্থায় রেখে দেন (সেদিনের জন্য যখন
তারা সংশোধিত হয়ে তাঁকে ডাকবে)।
বর্ণনায়, আবু সা’বাহ আল খাশানী (রা.)।
(a) আল-মুনযিরী বলেন, ‘হাদিসটির সূত্র
সহীহ বা হাসান বা এই দু’য়ের কাছাকাছি।
আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ৩/৩৯২)
সবে বরাত সম্পর্কিত আরো হাদিসঃ
১. "হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। একদা
আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে হযরত
আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা ! আপনি কি জানেন, লাইলাতুন
নিছফি মিন শা'বান বা শবে বরাতে কি
সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, হে আল্লাহ
পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম !এ রাত্রিতে কি কি
সংঘটিত হয়? আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, এ রাতে আগামী এক বছরে কতজন
সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক
মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ
রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ আল্লাহ
পাকের নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে
বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা
হয়"।(বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত
শরীফ)
আবু বাকর (রা.) বর্ণনা করেন আল্লাহ
তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে (দুনিয়ার
আসমানে) আসেন এবং সকলকে মাফ করে দেন
কেবল সেই ব্যক্তি ছাড়া যার হৃদয়ে ঘৃণা
বিদ্বেষ রয়েছে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর
সাথে শরিক সাব্যস্ত করে (অর্থাৎ মুশরিক)।
(আল-আলবানী বলেন,“হাদিসটি অন্য সূত্রে
সহীহ।”তাখরীজ মিশকাত আল মাসাবীহ,
(ক্রম, ১২৫১)(ইবন হাজর আল-আসক্বালানী
তাঁর আল-আমাল আল-মুথলাক্বাহ গ্রন্থ (ক্রম,
১২২)
"হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে
বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে
সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং
দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময়
পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন।
অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা
প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে
দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো
কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন
মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার
মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক
পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন" ( সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদীস১৩৮৪ )
" হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের
হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক
শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে
ঘোষনা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলুকাতকে
ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-
বিদ্বেষকারী ব্যতীত।" (ইবনে মাযাহ্, আহমদ,
মিশকাত শরীফ)
শবে বরাত ও সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) শবে
বরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীছসমূহের
বর্ণনাকারিদের মধ্যে অনেক বড় বড় ( এক
ডজনের মত ) সাহাবাও রয়েছেন। যাদের
কয়েকজনের পবিত্র নাম নিম্নে প্রদত্ত
হলোঃ
1) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রঃ)
2) হযরত আলী (রঃ)
3) হযরত আয়শা (রঃ)
4) হযরত আবু হুরায়রা (রঃ)
5) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর (রঃ)
6) হযরত আবু মুসা আশআরী (রঃ)
7) হযরত আউফ ইবনু মালিক (রঃ)
8) হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রঃ)
9) হযরত আবু ছালাবাহ আল খুসানী (রঃ)
10) কাছীর ইবনে মুররা আল হাজরমী (রঃ)
শবে বরাত ও তাবেয়ীঃ শামের বিশিষ্ট
তাবেয়ী যেমনঃ
1) হযরত খালেদ ইবনে মা'দান (রহঃ)
2) ইমাম মাকহূল (রহঃ)
3) লোকমান ইবনে আমের (রহঃ) প্রমূখ
উচ্চমর্যাদাশীল তাবেয়ীগণ শা'বানের
পনেরতম রজনীকে অত্যন্ত মর্যাদার দৃষ্টিতে
দেখতেন এবং এতে খুব বেশী বেশী ইবাদত ও
বান্দেগীতে মগ্ন থাকতেন বলে গ্রহণযোগ্য
মত পাওয়া যায়।
শবে বরাত ও অন্যান্য হাদীছগ্রন্থঃ সিহাহ
সিত্তার বাইরেও অনেক ইমামগণ তাদের
জগতবিখ্যাত বড় বড় হাদীসগ্রন্থে শবে বরাত
ও তার ফজীলত নিয়ে হাদীস বর্ণনা
করেছেন। যেমনঃ
১। ইমাম তাবরানী রচিত "আল কাবীর" এবং
"আল আওসাত"
২। ইমাম ইবনে হিব্বান রচিত "সহীহ ইবনে
হিব্বান"
৩। ইমাম বায়হাকী রচিত "শুআবুল ঈমান"
৪। হাফেয আবু নুআইম রচিত "হিলয়া"
৫। হাফেয হায়ছামী রচিত "মাজমাউয
যাওয়ায়েদ"
৬। ইমাম বাযযার তাঁর "মুসনাদ" এ
৭। হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী রচিত
"আততারগীব ওয়াত-তারহীব"
৮। ইমাম আহমদ তাঁর "মুসনাদ" এ
৯। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা
১০। হাফেয আব্দুর রাজ্জাক এর "মুসান্নাফ" এ
শবে বরাত ও মুহাদ্দিসীনে কেরামঃ শবে
বরাতের ফজীলত সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে
মুহাদ্দিসীনে কেরামেরা বরাবরই সনদসহ
বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন এ রাতে
সাহাবারা, সলফে সালেহীনরা ইবাদতে
মগ্ন থাকতেন বলে তাদের কিতাবে উল্লেখ
করেছেন। এসব মুহাদ্দিসীনদের মধ্যে অন্যতম
হলেনঃ
১। হাফিয নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবু বকর আল
হাইসামী (রহঃ)
২। হাফিয ইবনে রজব আল হাম্বলী (রহঃ)
৩। ইবনু হিব্বান (রহঃ)
৪। আদনান আবদুর রহমান (রহঃ)
৫। ইমাম বায়হাকী (রহঃ)
৬। হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী (রহঃ)
৭। ইমাম বাযযার (রহঃ)
৮। ইমাম উকায়লী (রহঃ)
৯। ইমাম তিরমিযী (রহঃ)
১০। হামযা আহমাদ আয যায়্যান (রহঃ)
১১। ইমাম যুরকানী (রহঃ)
১২। আল্লামা ইরাকী (রহঃ) প্রমুখ।
শবে বরাত ও অন্যান্য বুজুর্গানে দ্বীনঃ উপরে
উল্লেখিত সাহাবা, তাবেয়ীন, মুফাসসিরে
কেরাম, মুহাদ্দিসীনরা ছাড়াও অনেক বড় বড়
বুজুর্গানে দ্বীনও শবে বরাতের ফজীলত
স্বীকার করেছেন এবং এ দিনে অনেক নফল
ইবাদত করেছেন। যেমনঃ
১। উমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)
২। ইমাম আল শাফী (রহঃ)
৩। ইমাম আল আওযায়ী (রহঃ)
৪। আতা ইবনে ইয়াসার (রহঃ)
৫। হাফিয যয়নুদ্দীন আল ইরাক্বী (রহঃ)
৬। আল্লামা ইবনুল হাজ্ব আল মক্কী (রহঃ)
৭। ইমাম সুয়ুতী (রহঃ)
৮। ফিক্বহে হানাফীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনু
আলী আল হাসফাকী (রহঃ)
৯। ইমাম নববী (রহঃ)
১০। হাম্বলী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ
আল্লামা শায়খ মানসূর ইবনু ইউনুস (রহঃ)
১১। আল্লামা ইসহাক ইবনুল মুফলিহ (রহঃ)
১২। আল্লামা ইবনু নুজাইম হানাফী (রহঃ)
১৩। আল্লামা হাসান ইবনু আম্মার ইবনু আলী
আশ-শারাম্বলালী আল হানাফী (রহঃ)
১৪। আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী (রহঃ)
১৫। আল্লামা আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী
(রহঃ)
১৬। শায়খ আলা উদ্দীন আবুল হাসান আল
হাম্বলী (রহঃ)
১৭। মোল্লা আলী কারী (রহঃ)
১৮। ইমাম গাযালী (রহঃ)
১৯। হযরত আব্দুল ক্বাদের জ্বীলানী (রহঃ)
২০। ইমাম মুহাম্মদ আল জাযারী (রহঃ)
২১। মাওঃ ইসলামুল হক্ব মুযাহেরী (রহঃ)
২২। শায়খুল আদব হযরত আল্লামা এযায আলী
(রহঃ)
২৩। ইমাম আহমাদ (রহঃ)
২৪। আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ)
২৫। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী
(রহঃ)
২৬। হাফিয মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনু
আব্দির রহিম আল মুবারকপূরী (রহঃ)
২৭। মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ
কাশ্মীরী (রহঃ)
২৮। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী
(রহঃ)
২৯। হযরত মাওলানা মুফতী আজীজুর রহমান
সাহেব (রহঃ)
৩০। মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ শফী
(রহঃ)
৩১। তাঁরই ( মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ
শফী (রহঃ) ) এর সুযোগ্য সন্তান আল্লামা
মুফতী মুহাম্মদ তাকী উছমানী (দাঃবাঃ)
প্রমুখ সহ আরও অনেক বুজুর্গানে দ্বীন।
শবে বরাত ও কিতাবঃ মুসলিম বিশ্বের
মহামনীষীগণ কুরআন করীমের নির্ভরযোগ্য
তাফসীরগ্রন্থ, হাদীছের ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং
প্রায় বড় বড় আলেম নিজেদের রচিত
কিতাবাদীতে কেউ সংক্ষেপিত আকারে
কেউ বা সবিস্তারে শবেবরাতের ফজীলত ও
গুরুত্ব সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাঁরা
যেমন শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহ
আপন আপন গ্রন্থে লেখেছেন তেমনি বাস্তব
জীবনে রাতটিকে কিভাবে চর্চায় আনা হবে
তার নমুনা দেখিয়ে গেছেন। যেমনঃ
ক) পাঁচশত হিজরীর ইমাম গাযালী (রহঃ)
রচিত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন ( ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻋﻠﻮﻡ ﺍﺣﻴﺎﺀ )
খ) ৬০০ হিজরীর প্রারম্ভে হযরত বড়পীর
আব্দুল ক্বাদের জ্বীলানী (রহঃ) এর
গুনিয়াতুত তালেবীন ( ﺍﻟﻄﺎﻟﺒﻴﻦ ﻏﻨﻴﺔ )
গ) ৭০০ হিজরীর ইমাম মুহাম্মদ আল জাযারী
(রহঃ) এর আদদোয়াউ ওয়াস সালাত ফী যওইল
কুরআন ওয়াস সুন্নাহ ( ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺿﻮﺀ ﻓﻰ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺓ
ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ )
ঘ) ৭০০ হিজরীর ইমাম আবু জাকারিয়া ইবনে
ইয়াহইয়া ইবনে শারফুদ্দীন নববী (রহঃ) এর
রিয়াজুস সালেহীন ( ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ ﺭﻳﺎﺽ )
ঙ) এগারশত হিজরীর শায়েখ আব্দুল হক্ব
মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) এর মা ছাবাতা
বিস সিন্নাহ ( ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ ﺛﺒﺖ ﻣﺎ )
চ) তেরশত হিজরীর মাওলানা কারামত
আলী জৌনপুরী (রহঃ) রচিত মিফতাহুল
জান্নাহ ( ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻣﻔﺘﺎﺡ )
ছ) চৌদ্দশত হিজরীর হযরত আশরাফ আলী
থানভী (রহঃ) এর ওয়াজ ও তাবলীগ ( ﻭﺗﺒﻠﻴﻎ ﻭﻋﻆ )
জ) মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহঃ)
এর হাকীকতে শবেবরাত ( ﺑﺮﺍﺀﺕ ﺷﺐ ﺣﻘﻴﻘﺖ )
ঝ) তাঁরই ( মুফতী আজম মুফতী মোহাম্মদ শফী
(রহঃ) ) এর সুযোগ্য সন্তান আল্লামা মুফতী
মুহাম্মদ তাকী উছমানীর (দাঃবাঃ)
শবেবরাত ( ﺑﺮﺍﺀﺕ ﺷﺐ ) ঞ) মুফতী মীযানুর
রহমান সাঈদ এর কুরআন-হাদীছের আলোকে
শবেবরাত (গবেষণামূলক একটি অনবদ্য রচনা)
সহ অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থে লাইলাতুল
বারাআত এবং মাহে শাবান প্রসঙ্গে দীর্ঘ
আলোচনা শবেবরাতের তাৎপর্য, মাহাত্ম ও
মর্যাদার উপর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
শ বে বরাতের রাতে যে সকল লোকের আমল
কবুল হয় নাঃ এমন লোকের সংখ্যা প্রায়
এগার সেগুলি হলঃ
এক. মুশরিক অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর
সাথে যে কোন প্রকারের শিরকে লিপ্ত হয়
দুই. যে ব্যক্তি কারো প্রতি বিদ্বেষ
পোষণকারী
তিন. আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণকারী
চার. যে ব্যক্তি অপরের ভাল দেখতে পারে
না অর্থাৎ পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত
পাঁচ. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন
করে, চাই তা নিকটতম আত্মীয় হোক বা
দূরবর্তী আত্মীয় হোক
ছয়. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়
সাত. যে ব্যক্তি মদ্যপানকারী অর্থাৎ
নেশাকারী
আট. যে ব্যক্তি গণকগিরি করে বা গণকের
কাছে গমণ করে
নয়. যে ব্যক্তি জুয়া খেলে
দশ. যে ব্যক্তি মাতা-পিতার অবাধ্য হয়
এগার. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী
পুরুষ ইত্যাদি ব্যক্তির দুআও তওবা না করা
পর্যন্ত কবুল হয় না।
তাই শবে বরাতের পূর্ণ ফযীলত ও শবে
বরাতের রাতে দুআ কবুল হওয়ার জন্য
উল্লেখিত কবীরা গুনাহ সমূহ থেকে খাঁটি
দিলে তওবা করা উচিত। অন্যথায় সারারাত
জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেও কোন লাভের
আশা করা যায় না।
শবে বরাতের আমল বা করনীয়ঃ
এক. এই রাতে কবর যিয়ারত করা যেতে
পারে, তবে তা অবশ্যই দলবদ্ধ ও আড়ম্বরপূর্ণ
না হয়ে একাকী হওয়া উচিত
দুই. শবে বরাতের রাত্রিতে নামায-দুআ,
কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দরূদ
শরীফ ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকা ভাল
তিন. এই রাত্রিতে দীর্ঘ সিজদায় রত
হওয়া উচিত
চার. শবে বরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই
শাবান রোযা রাখা।
শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত
বিশ্বাস ও আমলঃ
এ রাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে
প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে।
এ রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে
করা ।
মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের
সাবেক গৃহে আসে।
এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা
খায় ও অন্যকে দেয়া ।
বাড়ীতে বাড়ীতে এমনকি মসজিদে
মসজিদেও মীলাদ পড়া ।
আতশবাযী করা ,সরকারী- বেসরকারী ভবনে
আলোক সজ্জা করা । কবরস্থানগুলো
আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা।
লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যাওয়া।
শেষ কথাঃ
আল্লাহ এই রাতে যদি দুনিয়ার আকাশে
আসেন, যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা
করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী লোক
আল্লাহর কৃপা লাভ করেন, যদি তারা গ্লানি
নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন –
তবে কোন যুক্তিতে বাধা আসবে? খামাখা
কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী
লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে
গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট
বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে ‘সহীহ
হাদিস’ টেনেও বাঁধানো যেতে পারে।
ঝামেলা সৃষ্টি করা যেতে পারে। হাদিস
না মানার অভিযোগ অভিযোগ আনা যেতে
পারে। মনে রাখতে হবে কুতর্কে আল্লাহ
নেই। তিনি সুতর্ক ও বিশ্বাসে ধরা দেন।
যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরাত
পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার
প্যাঁচ মেরে শবে বরাতের গুরুত্ব ও মহিমা
খেটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে
কিন্তু এতে ধর্মের কোন উপকার হবে না। শুধু
এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর
দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে,
আল্লাহর নাম নেয়, নামাজ পড়ে, জিকির
আযকার করে। এই সুবাদে তাদের
ছেলেমেয়েরাও ইবাদতের এহসাস লাভ করে
–কান্নাকাটি করে। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর
এসে যদি সে রাতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে
দেন তবে সর্বসাধারণ কী করবে?
মনে রাখা দরকার যে যেখানে বিদআতের
স্থান নেই সেখানে বিদআত আবিষ্কার করা
ঠিক নয়। মধ্য শাবানের রাতে যদি কেউ
বিদআত করে, তবে সেই বিদআতের বিপক্ষেই
কথা বলা উচিৎ, সেই দুষ্কর্ম দূর করা করা
উচিৎ। এই রাতে নামাজ পড়া, কোরান পড়া,
মাসনূন দয়া করা ও জিকির আযকার করা –
এসব ঠিক আছে। কিন্তু যারা রাসূলের
তরিকার বাইরে গিয়ে নানান গদবাধা প্রথা
তৈরি করে -তাত্থেকেও মানুষকে সতর্ক করা
দরকার।
إرسال تعليق