দীর্ঘায়ু লাভ করিবার আমল সুরা তওবার শেষাংশের ফযীলত (১) “লাকান্দ জা-য়াকূম্ রসূলুম মিং আংফুছিকুম্ ‘আঝিঝুন্ আলাইহি মা আনিত্তুম হ:ারীছুন্ আলাইকুম্ বিল্ মুহ্'মিনীনা রউফুর্ রহী:ম্, ফাইং তাওয়াল্লাও ফাক্কুল হাছ্‌বিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়া ক্বাল্‌তু ওয়াহুয়া রব্বুল্ আর্শিল্ আজীম্‌” | অর্থঃ (১) অবশ্য তোমাদের নিজেদের মধ্য হইতে তোমাদের নিকট পয়গম্বর আসিয়াছেন। তিনি তোমাদের মঙ্গল কামনা করিয়া থাকেন। তোমাদের দুঃখ, কষ্ট তাহার নিকট অসহ্য বলিয়া বোধ হয়। তোমাদের মুমিনদের উপর তিনি স্নেহশীল ও দয়ালু বটে। (২) অনন্তর যদি তাহারা বিমুখ হয়। (হে রসুল!) তুমি বলিয়া দাও যে, আল্ল-হ্‌ই আমার জন্য, যথেষ্ট তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। আমি তাহার উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি। (২) “ইন্নাল্লা-হাবিন্না-সি লা-র’উফুর রহীঃম্”। (সুরায় বাক্কারা আয়াত ১৪৩) অর্থঃ (২) অবশ্যই আল্ল-হ্ তা'আলা মানুষের প্রতি স্নেহাশীল ও দয়ালু। শানে নুযুলঃ কাফেররা ইসলামের সত্যতা ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর অলৌকিক মুজিযা দেখিয়াও তাঁহার সহিত বিদ্বেষ ভঙ্গে নানা রকম কুট তর্ক করিয়া বেড়াইত। তাহাদের ঐরূপ কুট ব্যবহারের উত্তর স্বরূপ এই আয়াত দুইটি অবতীর্ণ হয় এবং তাহাদিগকে বলিয়া দেওয়া হয় যে, শত অপমান জুলুম ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করিয়াও হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ) সর্বদা মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য দু’আ করেন, ইহাই যথেষ্ট প্রমাণ যে, তিনি সত্য রসুল। ইহা হইতে আর উৎকৃষ্ট প্রমাণ কি হইতে পারে? ইহা সত্ত্বেও যদি তাহারা সৎ পথে না আসে তবে কোন চিন্তার কারণ নাই, কেননা আল্ল-হর সাহায্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। এই আয়াত দুইটি দ্বারা হযরত রসুলুল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হইয়াছে। প্রায় সকল নবীই কোন না কোন কারণে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের ব্যবহারে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হইয়া অসন্তুষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন; এমনকি কোন কোন নবী (আঃ) তাঁহার উম্মতের জন্য বদ দু’আ পর্যন্ত করিয়াছেন। কিন্তু আমাদের হযরত রাসুলে করীম (সাঃ) নিজ উম্মতের জন্য মঙ্গল ও হিত ব্যতীত কখনও অনিষ্ট চিন্তা করেন নাই; বরং তিনি সকল অবস্থায় আমাদের প্রতি স্নেহময় ও দয়ালু ছিলেন এবং তিনি আমাদের ভাল ও মঙ্গলের জন্য আল্ল-হর নিকট দু'আ করিতেন। এই কারণেই তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব ও শ্রেষ্ঠ নবীরূপে সম্মানিত হইয়াছেন। আর আল্ল-হ্ পাক তাঁহাকে “রহ্:মাতুল্লিল্ আ'লামী-ন্” বা উভয় জগতের শান্তির দুত খেতাবে ভূষিত করিয়াছেন। “রউফুর ও রহী:ম্” আল্ল-হ্ তা'আলার দুইটি পবিত্র নাম। এই নাম দুইটি দ্বারা তাঁহার স্নেহ ও দয়ার সিফাতের বর্ণনা করা হইয়াছে। তিনি এই আয়াতে আমাদের হযরত রসুল (সঃ) কেও এই দুইটি পবিত্র নামের সিফাতে ভূষিত করিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। উপরোক্ত আয়াত দুইটির যিকির দ্বারা আমাদের রসুল (সাঃ) এর এই সিফাত দুইটির স্মরণ করা হয়ঃ ফলে তৎক্ষনাৎ তাঁহার দু'আ ও আল্ল-হর সাহায্য পাঠকের উপর বর্ষিত হয় এবং পাঠকের ইহকাল ও পরকালের অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়। হযরত রসুলুল্লাহর (সঃ) সিফাত বর্ণনা করিয়া তাঁহার দু'আ ও স্নেহ লাভ করার জন্য ইহাই সর্বোত্তম আয়াত। ফজিলতঃ ১। যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ১ বার এই আয়াত পাঠ করিবে সে রোজ হাশরে হযরত রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শাফায়াত (সুপারিশ) লাভ করিবে ২। যে কোন বিপদের সময় এই আয়াত দুইটি পাঠ করিলে বিপদ দূর হয়। ৩। প্রত্যেহ ৪১ বার পাঠ করিলে স্বপ্নে রসুলুল্লাহ (সঃ) এর যিয়ারত নছীব হইবে। ৪। যে ব্যক্তি প্রত্যেহ ফরয নামাযের পর এই পবিত্র আয়াত দুইটি ৭ বার করিয়া পাঠ করিবে, সে দুর্বল থাকিলে শক্তিশালী হইবে, লাঞ্ছিত থাকিলে সম্মানিত হইবে, পরাজিত থাকিলে জয়ী হইবে, গরীব থাকিলে ধনী হইবে, বিপদগ্রস্ত থাকিলে বিপদ হইতে মুক্তি পাইবে, তাহার অপমৃত্যু হইবে না, তাহার আয়ু বৃদ্ধি পাইবে ও তাহার সকল কাজ সহজ সাধ্য হইবে এবং স্বপ্নে হযরত রসুলুল্লাহর যিয়ারত নছীব হইবে। যেদিন এই আয়াত দুইটি পাঠ করিবে সেইদিন আহত বা নিহত হইবে না। ৫। রুগ্ন অবস্থায় এই আয়াত দুইটি পাঠ করিলে আরোগ্য লাভ হয়। এক ব্যক্তি ৭০ বৎসর পর্যন্ত রুগ্ন ছিলেন। পরে এই আয়াত দুইটি পাঠ করিলে, সে এই আমলের বরকতে ১২০ বৎসর বাঁচিয়াছিলেন। আয়ু বৃদ্ধির জন্য ইহা হইতে উৎকৃষ্ট কোন আয়াত পবিত্র কুরআনে অবতীর্ণ হয় নাই । ৬। কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর ইবনে মেহেদী হযরত রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখিলেন। হযরত (সঃ) তাঁহাকে হুকুম করেন যে, শিবলী তোমার নিকট আসিলে তুমি তাঁহাকে সম্মান করিও, আমিও তাঁহাকে সম্মান করিয়া থাকি, কেননা সে ৮০ বৎসর যাবৎ প্রত্যেক নামাযের পর সূরা তওবার শেষ দুই আয়াত পাঠ করিতেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post