বিসমিল্লাহ, তাসমিয়াহ
 তাসমিয়াহ


তামিয়াহ্
(নাম বাক্য ও কল্যাণ বাক্য)
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রহ্: মানির্ রহীম্।
অর্থঃ “পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে
আরম্ভ করিতেছি।”
ইহাকে কুরআনের তাজ বলা হয়। এই আয়াত যোগেই
কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হইয়াছে। হযরত রসুলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু আলাহি অসাল্লাম বলিয়াছেনঃ “ইহা কুরআনের
সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত।” এই আয়াতের মধ্যে রহমান (পরম
করুণাময়) ও রহী:ম্ (অতি দয়ালু) আল্ল-হ্ তা'আলার
এই পবিত্র দুইটি নাম সংযোজিত রহিয়াছে বলিয়া ইহার
অসীম মর্যাদা ও ফযীলত রহিয়াছে। আল্ল-হ্ তা'আলার
নামের সহিত এই পবিত্র গুণবাচক নাম দুইটির সমাবেশ
হইয়াছে বলিয়া তাসমিয়াহ্ অসীম ফযীলতপূর্ণ।
“তাসমিয়াহ্” মুসলমানকে তাঁহার ধর্ম ও কর্ম জীবনের
প্রত্যেক অবস্থায় আল্ল-হ্ তা'আলার অসীম করুণা ও
দয়ায়, ধ্যান ও সাধনাকে জাগাইয়া রাখিতে শিক্ষা
দিতেছে। সারাজাহানের সমস্ত সৃষ্টি তাঁহার হুকুম ও
ইচ্ছায় হইতেছে। তাঁহার হুকুম তাঁহার আদেশ ও ইচ্ছা
ব্যতীত কোন কার্য বা বস্তুর অস্তিত্ব লাভ হইতে পারে না,
এই জন্য কোন কাজ শুরু করিবার আগে তাঁহার
করুণাময় নাম স্মরণ করিয়া তাঁহার দয়া ও ক্ষমতার
সাহায্য লইতে হয়! এই উদ্দেশ্যের জন্য তাসমিয়াহ্ অতি
তাৎপর্যমন্ডিত আয়াত। হযরত রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু
আলাই:হি অসাল্লাম ফরমাইয়াছেন যে, “কোন শুভ কাজ
শুরু করিবার আগে ‘তাস্‌মিয়াহ্’ পড়িয়া শুরু না করিলে
তাহা বরকতশূন্য হইয়া যায়।” তাসমিয়ার গৌরব ও
ফযীলত বর্ণনাতীত।
শানে নুযুলঃ হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ) যখন মিরাজে গমণ
করেন, তখন তিনি বেহেশতে উপস্থিত হইয়া 'হাউযে-
কাউছারের' উৎসস্থল কোথায় তাহা জানিবার জন্য
আল্ল-হ্ তা'আলার নিকট আরজ করেন। আল্ল-হ্
তা'আলার আদেশ হইল, তুমি নহরটির কিনারা ধরিয়া
উহার উৎস-স্থলের দিকে অগ্রসর হও” হযরত (সঃ)
বহুদুর চলিয়াও উহার উৎস-স্থল দেখিতে পাইলেন না।
পুনরায় আরজ করিলেন, “প্রভু! তুমি অনুগ্রহ করিয়া
দেখাইয়া দাও, নতুবা আজি দেখিতে পাইব না” আদেশ
হইল “তুমি বিস্‌মিল্লাহির রহমানির রহী:ম বলিয়া
অগ্রসর হও।” এইবার হযরত (সঃ) সামান্য অগ্রসর
হইতেই দেখিতে পাইলেন একটি প্রকাণ্ড বাক্সের মধ্যে
হইতে উহা প্রবাহিত হইতেছে। হযরত (সঃ) বাক্সের
ভিতর কি আছে তাহা জানিবার জন্য প্রার্থনা করিলেন।
আদেশ হইল “বিসমিল্লাহির রহমানির্ রহী :ম্‌” বলিয়া
বাক্সের দরজায় আঘাত কর।” হযরত (সঃ) বাক্সের দ্বারে
আঘাত করিলে উহা খুলিয়া গেল। হযরত (সঃ) দেখিতে
পাইলেন ঐ বাক্সের ভিতর শুধু “বিসমিল্লাহির
রহ:মানির রহী :ম্” লিখিত আছে। তাসমিয়াহ্ শরীফের
‘মীম’ অক্ষরের প্রান্ত হইতে হাউযে কাউছারের অমৃত
ধারাটি বহির্গত হইতেছে। 
বিসমিল্লাহির ফযীলতঃ
১। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, আল্ল-হ্ তা'আলা
কোন এক নবীর প্রতি অহি পাঠাইয়াছিলেন যে, কেহ
জীবনে ৪ হাজার বার বিস্‌মিল্লাহ্ পড়িয়াছে বলিয়া তাহার
আমলনামায় লেখা থাকিলে হাশরের দিন তাহার পতাকা
আরশের নিকট স্থাপিত হইবে। (তঃ কবীর)
২। হযরত উমর (রাঃ) কেবল বিস্‌মিল্লাহ্ লিখিত একটি
টুপী পাঠাইয়া রোমের সম্রাটের শিরঃপীড়া আরোগ্য
করিয়াছিলেন । হযরত খালেদ (রাঃ) একজন
অগ্নিপূজকের প্রস্তাব অনুসারে ইসলামের গৌরব
প্রদর্শনকল্পে বিসমিল্লাহ্ বলিয়া বিষ পান করিয়াছিলেন।
কিন্তু তাহাতে কোন ক্ষতি হয় নাই।
৩। হযরত নূহ (আঃ) এই আয়াতের কল্যাণে
মহাপ্লাবনের সময় রক্ষা পাইয়াছিলেন। নমরূদের মেয়ে
বিবি রহীমা উহার গুণে ভীষণ অগ্নি কুণ্ড হইতে রক্ষা
পাইয়াছিলেন। ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া উহার কল্যাণে
ফুটন্ত তৈলের মধ্যে নিরাপদে ছিলেন। ফেরাউন নিজ
প্রাসাদের দরজায় এই পবিত্র আয়াতটি লিখিয়া রাখায়
বহুদিন পর্যন্ত আল্ল-হ্ র গজব হইতে নিরাপদ ছিল।
হযরত যায়েদ ইবনে হারেস ইহারই কল্যাণে এক ভীষণ
দুশমনের কবল হইতে রক্ষা পাইয়াছিলেন।

৪। হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, যখন
বিস্‌মিল্লাহ্ শরীফ নাযিল হয়, তখন মেঘ প্রবল বেগে
পশ্চিম দিক হইতে পূর্ব দিকে ছুটিতে থাকে। বায়ু প্রবাহ
বন্ধ হইয়া যায়। সমুদ্রের পানিতে প্রবল তরঙ্গের সৃষ্টি
হয়।
৫। যে ব্যক্তি বিস্‌মিল্লাহ্ শরীফ প্রত্যহ ৭৮৬ বার করিয়া
এক সপ্তাহ পর্যন্ত পড়িবে, সে যেই নেক কাজের নিয়ত
করিয়া পাঠ করিবে তাহাই পূর্ণ হইবে।
৬। যে ব্যক্তি প্রত্যহ অধিক পরিমাণে ‘বিস্‌মিল্লাহ্
পড়িবে, আল্ল-হ্ তা'আলা তাহার গুণাহ্ মাফ করিবেন
এবং তাহার পরলোকগত মাতা-পিতার গুণাহ্ মাফ হইয়া
যাইবে।
৭। অধিক সংখ্যায় ‘বিস্‌মিল্লাহ্’ পাঠ করিলে রুযী বৃদ্ধি
পাইবে এবং মানুষ পাঠকারীর বাধ্য থাকিবে ।
৮। একশত বার ‘বিস্‌মিল্লাহ্’ পাঠ করিয়া ব্যথাস্থানে বা
যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির উপর ৭ দিন পর্যন্ত একশত বার করিয়া
ফুঁকিলে ব্যথা বা যাদু দূর হইয়া যায় ।
৯। রাত্রিতে শয়নকালে ২১ বার ‘বিস্‌মিল্লাহ্’ পাঠ করিয়া
শুইলে সেই রাত্রে শয়তান, চোর, ডাকাত, দৈবমৃত্যু,
অগ্নিদাহ প্রভৃতি প্রত্যেক প্রকার বিপদ হইতে নিরাপদে
থাকিবে।
১০। কিতাবে আছে, কোন এক ব্যক্তির শেষ উপদেশ
মতে তাঁহার মৃত্যুর পর তাহার কপালে ও বুকে
‘বিসমিল্লাহ্’ লিখিয়া দেওয়া হইয়াছিল। ঐ ব্যক্তি উহার
বরকতে কবর আযাব হইতে সম্পূর্ণ রক্ষা পাইয়াছিলেন ।
১১। ‘বিস্‌মিল্লাহ্’ শরীফ ৪১ বার পড়িয়া পাগল, মৃগীগ্রস্থ
ও জ্বিনে পাওয়া ব্যক্তির কানে ফুঁক দিলে তাহার চৈতন্য
ফিরিয়া আসিবে।
ধন্যবাদ আপনাদের কে আমাদের সবাইকে আল্লাহ তায়ালা এই আমল গুলো করার তাওফিক দান করুন।

Post Tags: বিসমিল্লাহ এর গুরুত্ব, বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করার ফজিলত, বিসমিল্লাহ কোন সূরার আয়াত, বিসমিল্লাহ বলার হাদিস, বিসমিল্লাহর বরকত, বিসমিল্লাহ জিকির, কোন কোন কাজে বিসমিল্লাহ বলতে হয় তার একটি তালিকা, আরবি ভাষা



Post a Comment

Previous Post Next Post