কুরআনের মাহাত্ম ও কুরআন পাঠের ফজিলত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহী :ম্
(পরম করুণাময় ও দয়াময় আল্ল-হর নামে শুরু
করিতেছি)
মানুষের ইহকালে ও পরকালে যাহা প্রয়োজন, তাহার
প্রত্যেকটি বিষয়ই মহাগ্রন্থ কুরআন শরীফে আছে।
আল্প-হ্ তা'আলা সুরা হাশরে বলিয়াছেন।
[বিস্‌মিল্লাহির রহমানির রহী :ম্‌] “লাও আংঝাল্না-
হাযাল্ কুরআনা 'আলা জাবালিল্ লারাআইতাহু
খ-শিআম্‌ মুতাছাদ দি‘আম্ মিন্ খশ্ইয়াতিল্লা-হি”। অর্থঃ যদি কুরআনকে পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করিতাম
তবে তুমি নিশ্চয়ই দেখিতে পাইতে যে; উহা আল্লাহর
ভয়ে বিদীর্ণ ও অবনত হইয়া আছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ আমাদের প্রিয় নবী সাইয়্যিদুল
মুরসালিন মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ
আল্লাহ তা'আলার বাণী। ইহা আল্ল-হ্ তা'আলার
সম্মানিত দ্রুত ফেরেশ্তা শ্রেষ্ঠ হযরত জিব্রাইল (আঃ)
মারফত দীর্ঘ ২৩ বৎসরে নাযিল হইয়াছে। পবিত্র
কুরআন আল্ল-হ্ তা'আলার সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ গ্রন্থ।
বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আঃ) হইতে শুরু করিয়া
যুগে যুগে আল্ল-হ্ তা'আলা বিভিন্ন পয়গাম্বরের (আঃ)
উপর মোট ১০৪ খানা ধর্মগ্রন্থ নাযিল করিয়াছেন।
ইহাদের মধ্যে ১০০ খানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থ, ইহাদের এক
এক খানাকে, “সহীফাহ্” বলা হয়। অপর চার খানা
বৃহৎ; এগুলির প্রত্যেক খানা “কিতাব” নামে অভিহিত।
সহীফাহ্ গুলির ১০ খানা হযরত আদম (আঃ) এর উপর,
৫০ খানা হযরত শীশ (আঃ) এর উপর, ৩০ খানা হযরত
ইদ্রিছ (আঃ) এর উপর এবং ১০ খানা হযরত ইব্রাহীম
(আঃ) এর উপর নাযিল হইয়াছে। বৃহৎ চারি খানা
কিতাবের মধ্যে হযরত মুসা (আঃ) এর উপর তাওরাত,
হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর যবুর, হযরত ইসা (আঃ)
এর উপর ইন্‌জীল্, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) এর
উপর কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হইয়াছে। পবিত্র কুরআন ব্যতীত অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থসমূহের প্রায়
সবগুলিরই বর্তমানে অস্তিত্ব নাই। তাওরাত ও ইনজীলের
আংশিক অস্তিত্ব থাকিলেও সেগুলি পরিবর্তিত ও বিকৃত
অবস্থায় রহিয়াছে। কিন্তু “পবিত্র কুরআনের কোন একটি
বাণী পরিবর্তিত হয় নাই বা হইবেও না”। আল্ল-হ্
তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলিয়াছেনঃ
ইন্না নাহ্্নু নাঝ্জালনায্ যিক্রা ওয়া ইন্না-লাহু
লা-হাফিযূন্” ।
অর্থঃ আমি নিশ্চয় যিকর অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি
এবং নিশ্চয়ই আমি উহার হেফাযতকারী।
পবিত্র কুরআন আল্ল-হ্ তা'আলার নিকট হইতে অবতীর্ণ
সর্বজ্ঞানময় পূর্ণাঙ্গ ধর্মগ্রন্থ, পৃথিবীতে ইহার তুলনা নাই ।
যাবতীয় জ্ঞানের ভাণ্ডার পবিত্র কুরআন পাঠ করা ও উহার
অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর অবশ্য
কর্তব্য। আল্ল-হ্ তা'আলা মানুষকে কুরআন শরীফ পাঠের
জন্য অসংখ্য সওয়াব ও ফযীলত দান করিবেন। হযরত
(সঃ) বলিয়াছেন-
আফ্-যালুল্ ইবা-দাতি তিলাওয়াতুল্ কুরআন
অর্থঃ সকল প্রকার নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ
তিলওয়াতই সর্বাধিক শ্রেয়।
রসুলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন, “যেই গৃহে কুরআন শরীফ
পাঠ করা হয় সেই গৃহের মানুষ সকল অবস্থায় সুখ স্বাচ্ছন্দে কালাতিপাত করিবে, সেই গৃহে ফেরেশতাগণ।
গমনাগমন করিবেন এবং তথা হইতে শয়তান পলায়ন
করিবে”।
তিরমিযী শরীফের একটি হাদীছে আছেঃ
মাং কারা’আ হার্ফাম্ মিনাল্ কুরআনি ফালাহু বিহী
হাসানাতুও ওয়াল্ হাসানাতু বিআশ্ির আম্‌ছালিহা। লা
আক্কালু আলিফ্ লা-ম্ মীম হারুফুন্ বাল্ আলিফুন
হারফুন্ ওয়া লামু হারফুন্ ওয়া মিমু হারফুন্”।
অর্থঃ যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করিবে। সে
দশটি নেকী পাইবে। হযরত (সঃ) বলেন- আমি আলিফ
লাম মীমকে একটি অক্ষর বলি না বরং আলিফ একটি
অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর।
অতএব এই তিনটি অক্ষর পড়িলে ত্রিশটি নেকী পাওয়া
যাইবে।
হযরত (সঃ) আরও বলিয়াছেন-
ইন্নাল্লাহা ই:য়ার্ফাউ রিহা-যাল্ কুরআনি আক্বওয়ামাও
ওয়া ই:য়াদা'উ বিহী আখারীন্” ।
অর্থঃ অবশ্য আল্ল-হ্ তা'আলা এই কুরআনের উছিলায়
কতক শ্রেণীর মানুষকে উন্নত এবং কতেক শ্রেণীর
মানুষকে অবনত করিবেন। অর্থাৎ যাহারা কুরআন শরীফ শিক্ষা করিয়া তদনুযায়ী আমল করিবে, তাহারাই উন্নত
হইতে পারিবে এবং যাহারা উহা শিক্ষা করিবে না এবং
কুরআন শরীফের আদেশানুযায়ী কাজ করিবে না, তাহারা
অবনত ও অকৃতকার্য হইবে।
অন্য একটি হাদীসে আছে-
মান্ কারাআল্ কুরআ-না ওয়া ‘আমিলা বিমা ফিহী
উলবিসা ওয়া-লিদাহু তাজাইল্ ইয়াওমাল্ কিয়া-মাতি
দুয়ূ'হু আহ:সানু মিং দুয়িশ্শাম্‌সি”।
অর্থঃ যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়িবে এবং তদানুযায়ী
আমল করিবে, কিয়ামতের দিন তাঁহার পিতা-মাতার
মাথায় একটি টুপী পরান হইবে যাহার জ্যোতি সূর্যের
জ্যোতি হইতেও উত্তম হইবে।
প্রত্যহ কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা উচিত। কুরআন
শরীফ শুদ্ধ করিয়া শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের
কর্তব্য। সঠিক উচ্চারণের সহিত শুদ্ধ করিয়া পাঠ করা
উচিত। আল্ল-হ তা'আলা পবিত্র কুরআনের সুরা
মুযাম্মিলেন বলিয়াছেন-
"ওয়া রাত্-তিলিল কুরআনা তারতীলা”।
অর্থঃ কুরআর আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। পবিত্র কুরআন শরীফে আছে-
(১) ৩০ পারা (২) ৭ মঞ্জিল (৩) ১১৪টি সুরা (৪)
৬৬৬৬টি আয়াত (৫) ৫৪০টি রুকু (৬) ১৪টি সিজদাহ।
সুরা ফাতিহা ঃ কুরআনের জননী
সুরা ইয়া ছী-ন্ ঃ কুরআনের দিল।
সুরা আর্ রহমান ঃ কুরআনের সৌন্দর্য।
হুজুর পাক (সাঃ) বলেছেন “কুরআন শরীফের মধ্যে ১টি
সুরা আছে যাহা পাঠকের জন্য সুপারিশ করিবে ও তাহার
কবর আযাব মাফ হইয়া যাইবে। উহা হইল সুরা
তাবারা কাল্লাজি” (সুরা মুলক) ও “সুরা মুজাম্মিল
পাঠে সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকা যায় ও দোজখের আগুন হইতে
বাঁচা যায়।
সুরা ওয়াক্বিয়াহ্” পাঠের আমলে প্রচুর ধন সম্পদ লাভ
“সুরা ইখলাছ্‌” ৩ বার পাঠ করিলে পূর্ণ কুরআন পাঠ
করার ছওয়াব হাসিল হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই আমল গুলো করার তাওফিক দান করুন আমিন।

Tags:
কোন সূরা তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে?
কুরআন ও হাদীস, যারা কোরআন তেলাওয়াত, কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে, কুরআনের ফজিলত pdf, Quran telawater fojilot, তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব, কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত আল কাউসার.

Post a Comment

Previous Post Next Post